ল্যাসিক ও এর পরবর্তী সংস্করণ ফেমটো-ল্যাসিক হলো সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রচলিত লেজার ভিশন কারেকশন পদ্ধতি।

ক্লিনিক্যাল ব্যবহারের জন্য ফেমটোসেকেণ্ড সর্বপ্রথম ২০০০ সালে উম্মোচিত হয়। অধিক নিরাপত্তা ও উচ্চ মানের নিখুঁত ফ্ল্যাপ তৈরির পাশাপাশি আশানুরূপ ফলাফল নিশ্চিতকরণে ফেমটোসেকেণ্ড লেজার একটি অত্যন্ত কার্যকরী পন্থা হিসেবে সারাবিশ্বে বহুল প্রচলিত পদ্ধতি।

ফেমটো-ল্যাসিকেরক্ষেত্রে লেজারের সাহায্যে ফ্ল্যাপ তৈরির এই অংশটুক ছাড়া বাকি পুরো পদ্ধতিটাই গতানুগতিক ল্যাসিক অপারেশনের মত।



ফেমটো-ল্যাসিক কি?
ফেমটো-ল্যাসিক হল ল্যাসিকের পূর্বে ফ্ল্যাপ তৈরিরক্ষেত্রে গতানুগতিক ব্লেডের ব্যবহারের পরিবর্তে একই প্রক্রিয়াটি ফেমটোসেকেণ্ড লেজারের সাহায্যে তৈরির পদ্ধতি। গতানুগতিক ব্লেড ফ্ল্যাপের তুলনায় এটি অনেক বেশী নিরাপদ, যার ফলে উচ্চ মানের নিখুঁত ও পরিকল্পিত পরিমাপ অনুযায়ী ফ্ল্যাপ তৈরি নিশ্চিতকরণ সম্ভব।এটি অত্যন্ত রোগী বান্ধব পদ্ধতি যার ফলে ফেমটোসেকেণ্ড লেজারের সাহায্যে ফ্ল্যাপ তৈরির সময় রোগীর কোন ব্যাথা অনুভূত হয় না। ফ্ল্যাপ তৈরি করার পর রোগীকে ফেমটোসেকেণ্ড লেজার মেশিন থেকে এক্সাইমার লেজার মেশিনে স্থানান্তরিত করা হয় যেখানে মূল পাওয়ার কারেকশন সম্পন্ন করা হয়।
VisuMax এর সাহায্যে ফেমটো- ল্যাসিক করানোর সুবিধাসমূহ
ফেমটোসেকেণ্ড লেজারের সাহায্যে ফ্ল্যাপ তৈরির প্রক্রিয়াটি খুবই অল্প সময়ে করা হয়, ৫০০কিলোহার্টজ গতিতে লেজার ব্যবহার করা হয় বলে রাখা ফ্ল্যাপ হয় অত্যন্ত নিখুত এবং পরকল্পিত পরিমাপ অনিযায়ী রোগীরা যা সার্জন অতি সহজে তুলে একপাশে সড়িয়ে রাখতে সক্ষম হন।


  • উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফেমটোসেকেণ্ড প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ফ্ল্যাপ হয় খুবই নিখুঁত
  • ফ্ল্যাপ এর পুরুত্ব ও আকৃতি হয় একদম সঠিক ও পরিকল্পিত পরমাপ অনুযায়ী
  • একটি মাত্র ধাপে সম্পন্ন হয়
  • সাকশনের চাপ খুবই কম থাকে এবং চোখের প্রেশার স্বাভাবিক ও সহনীয় মাত্রায় থাকে
  • সাকশনের সময়টুকু দৃষ্টি ঝাপসা থাকলেও কোন রোগী কোনরকম অসুবিধা বোধ করে না
  • শুধুমাত্র আসল লেজার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়েই সাকশন প্রয়োগ করা হয়
  • তৈরিকৃত ফ্ল্যাপকে লেজারের পর খুব সহজেই সঠিক জায়গায় বসানো যায়
  • কর্নিয়ার উপরিভাগ খুবই মসৃণ থাকে
  • সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ভাবে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয়
  • সার্জারির পূর্বে প্রতিটি ট্রিটমেন্ট প্যাক সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যালিব্রেশন করা হয়ে থাকে
  • পুরো পদ্ধতিটিতে রোগী কোন প্রকার অসুবিধাবোধ করেন না।
  • এটি আমেরিকার FDA অনুমোদিত।
ফেমটো-ল্যাসিক কারা করা পারে?
নিম্নলিখিতক্ষেত্রে ফেমটো-ল্যাসিক সার্জারি বিবেচনা করা হয়ঃ

• যাঁদের বয়স ১৮ বছরের ওপর;
• যাঁদের চশমার পাওয়ার -১.০০ বা + ১.০০ এর ওপর এবং বিষম দৃষ্টি -৬.০০এর মধ্যে;
• যাঁদের চোখে রেটিনা, কর্নিয়ায় সমস্যা বা অন্য কোন অসুখ নেই।
• গত ১ বছরের মধ্যে চশমার পাওয়ার বাড়েনি;
• অন্তঃসত্ত্বা নয় (মহিলাদের জন্য) ;
• যাঁরা চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স পরতে চান না;
• যাঁরা সার্জারি চলাকালীন সময়ে একটি সবুজ আলোর দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকতে পারবেন।

ফেমটো-ল্যাসিকেরক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পাওয়ার কারেকশন করা সম্ববঃ
প্রস্তুতি এবং সার্জারি পূর্ববর্তী আলোচনা
অপারেশনের পূর্বে আপনি ফেমটো-ল্যাসিক করানোর জন্য উপযুক্ত কিনা সেটি নিশ্চিত করার জন্য চোখের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ত্রুটিবিচ্যুতি নির্ণয়ে বিশেষ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা টেস্ট করা হয়। এই টেস্ট রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেন রোগীর চোখে ফেমটো-ল্যাসিক করা যাবে কিনা অথবা ফেমটো-ল্যাসিক করা গেলেও কতটুকু পাওয়ার কারেকশন করা যাবে।

ফেমটো-ল্যাসিক সারজারিরক্ষেত্রে চশমার পাওয়ার, কর্নিয়ার পূরুত্ব, কর্নিয়ার ধরনসহ আরও নানাবিধ বিষয় মূখ্য ভূমিকা পালন করে। টেস্টপরবর্তীকালে ডাক্তারের সাথে আলোচনায় উপোরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও রোগীর পেশা ও শখের বিষয়গুলো বিবেচনা করে একজন সার্জন তাঁর রোগীর পাওয়ার কারেকশনের সিধান্ত নিয়ে থাকেন। ডাক্তারের সাথে আলোচনার সময় আপনার পূর্ববর্তী চশমার প্রেসক্রিপশনগুলো সাথে রাখা জরুরী।

টেস্ট এবং টেস্টপরবর্তীকালে নিম্নলিখিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করা হয়ে থাকেঃ

• রোগীর চোখে একটি ড্রপ দিয়ে চোখের মণি বড় করে চোখ পরীক্ষা করা হয় যাতে রেটিনার স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হয় এবং সেই সাথে চশমার পাওয়ার পরীক্ষা করা হয়।
• চোখের চাপ বা প্রেশার (গ্লকোমা) আছে কিন সেটি নিশ্চিত করা হয়।
• এছাড়াও রোগীর চোখের কর্নিয়ার আকার পরিমাপ করা হয় এবং কেরাটোকোনাস (কর্নিয়ার একপ্রকার অসুখ) আছে কিনা বা ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা সেটাই যাচাই করা হয়।
• রোগীর চোখের কর্নিয়ার পূরুত্ব মাপা হয় যার ভিত্তিতে চশমার পাওয়ার কারেকশনের মাত্রা নির্ধারিত হয়।

আপনি যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী হন তবে টেস্টের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।

টেস্টপরবর্তীতে যদি প্রতিয়মান হয় যে আপনি ফেমটো-ল্যাসিক সার্জারির জন্য উপযুক্ত নন তাহলেঃ

• আপনার ডাক্তার আপনাকে বিষদভাবে জানাবেন কেন আপনি যোগ্য নন
• আপনি তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে আপনি অন্য কোন রিফ্র্যাক্টিভ সার্জারি করাতে চান, না কি আপনার চশমা বা লেন্সের ব্যবহার চালিয়ে যাবেন।.
কিভাবে আপনি সার্জারির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন?
যদি আপনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী হন, তাহলে বেশির ভাগ সার্জনই আপনাকে সার্জারির আগের কয়েক সপ্তাহ লেন্সের পরিবর্তে চশমা পড়তে বলবেন। সার্জারির নির্ধারিত দিনে কোন প্রকার মেক আপ, লোশন বা সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। আপনার সাথে অবশ্যই আরো একজনকে সাথে আনতে হবে যিনি সার্জারির পর আপনাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন।

সম্মতিপত্র:
সার্জারি সম্পর্কিত সব রকম সুবিধা, বিকল্প পদ্ধতি ও সম্ভাব্য জটিলতা সম্পর্কে অবহিত করার পর আপনাকে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বলা হবে।

ফেমটো-ল্যাসিক কিভাবে করা হয়ঃ
ফেমটো-ল্যাসিক সার্জারি দুটি ধাপে সম্পন্ন করা হয় যাতে আমরা জার্মানির বিশ্ববিখ্যাত Carl Zeiss এর VisuMax ও MEL-90 লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি।

প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া সমূহঃ:

  • অপারেশনের পূর্বে চোখে যে এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে বলা হয় তা অপারেশনের আগেরদিন থেকে ৬ঘন্টা অন্তর দৈনিক ৪ বার ব্যবহার করতে হবে।
  • অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার পর আপনাকে লেজার মেশিনের বেডে শুয়ে পড়তে বলা হবে।
  • অনুভূতিনাশক আইড্রপ আপনার চোখে দেওয়া হবে।
  • চোখের পলক যেন না পড়ে সে জন্য একটি আইলিড হোল্ডার ব্যবহার করা হবে।
  • যে চোখটি সার্জারি করা হবে না সেটি একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে।
  • এরপর আপনাকে একটি সবুজ আলোর দিকে তাকাতে বলা হবে এবং এসময় ধীরে ধীরে আলোটি আপনার চোখের কাছে চলে আসবে আর আপনাকে একদৃষ্টিতে সেই আলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে বলা হবে।
  • সার্জারির শুরুতে লেজার সিস্টেমে একটি ওয়ানটাইম ডিসপোসিবল ট্রিটমেন্ট প্যাক ব্যবহার ব্যবহার করা হয় যা একপর্যায়ে হালকাভাবে আপনার কর্নিয়ায় স্পর্শ করবে আর এসময় সেই সবুজ বাতিটি কিছু সময়ের জন্য একটু ঘোলাটে দেখাবে।.
  • আপনার ডাক্তার আপনাকে প্রতি মুহূর্তে নির্দেশনা দিয়ে যাবেন। এই সময়ে আপনি লেজার মেশিনের একটি স্বয়ংক্রিয় নির্দেশনাও শুনতে পাবেন। আপনাকে এই সময়টাতে পুরোপুরি শান্ত থাকতে হবে কারণ তখন লেজার সার্জারী শুরু হবে।
  • ফেমটোসেকেণ্ড লেজারের সাহায্যে ফ্ল্যাপ তৈরি হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে বেডসহ পাওয়ার কারেকশনের জন্য MEL-90 এক্সাইমার লেজার মেশিনের নিচে নিয়ে যাওয়া হবে
  • এই পর্যায়ে ফেমটোসেকেণ্ড লেজারের সাহায্যে তৈরিকৃত ফ্ল্যাপটি ইন্সট্রুমেন্টের সাহায্যে তুলে একপাশে সড়িয়ে রেখে এক্সাইমার লেজারের সাহায্যে চশমার পাওয়ার কারেকশন করা হবে।
  • লেজার প্রয়োগ শেষ হলে চোখ ধুয়ে পরিষ্কার করে কর্নিয়ার সেই সড়িয়ে রাখা ফ্ল্যাপটি আবার নামিয়ে দেয়া হবে এবং অপারেশন শেষ করা হবে।
  • এই পুরো অপারেশনে কোন প্রকার ইনজেকশন, সেলাই বা ব্যাণ্ডেজ ব্যবহার করা হয় না

সার্জারির পরবর্তী ধাপসমূহ
• সার্জারীর পরপর আপনার চোখে আইড্রপ দেওয়া হবে

• এরপর নার্স আপনাকে বিশ্রাম করার জন্য একটি বিশ্রাম কক্ষে নিয়ে যাবেন

• এরপর সার্জন আপনার চোখ স্লিট ল্যাম্প দিয়ে পরীক্ষা করে দেখবেন

• আপনার ওষুধ গুলো ঠিকমতো বুঝিয়ে দিয়ে আপনাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে

• অপারেশনের পরপরই আপনার চোখ লাল হতে পারে, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে, কারো কারো সামান্য মাথা-ব্যাথা অনুভুত হতে পারে তবে এ সবকিছুই স্বাভাবিক। মাথা-ব্যাথার জন্য প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক পেইনকিলার ট্যাবলেট খেতে পারেন।

• সার্জারীর পর আপনি কিছুটা আলোক সংবেদনশীল হতে পারেন এবং সরাসরি আলোর দিকে তাকাতে প্রথম প্রথম সমস্যা হতে পারে।এজন্য বাইরে ক’দিন সানগ্লাস ব্যবহার করা ভাল, কিন্তু বাসায় থাকলে তার প্রয়োজন নেই।

• এছাড়াও অপারেশনের পর আপনার চোখ সামান্য খচ খচ করতে পারে তাই বাড়ি গিয়ে পারলে ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমান খুব জরুরী তাতে অপারেশন পরবর্তী অস্বস্তিবোধ কেটে যাবে। তবে কোনোভাবেই চোখ কচলানো যাবেনা। কারণ চোখ কচলানোর ফলে অপারেশনের সময় চোখের কর্নিয়ায় যে লেয়ারটা তোলা হয় তা কোন কারনে সরে গেলে দৃষ্টিগত সমস্যা হতে পারে এবং আসস্তিবোধ বাড়তে পারে।

• অপারেশনের দিন দৃষ্টি কিছুটা ঝাপসা থাকতে পারে তবে পরদিন সকালে সেটা থাকেনা বললেই চলে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমও হতে পারে।

• কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে

• সব ওষুধ ও আইড্রপগুলো সময় ও নিয়ম-মেনে ব্যবহার করা চোখের দ্রুত সেরে উঠতে খুবই জরুরী।

• আমরা আমাদের রোগীদেরকে সার্জারি পরবর্তী এক বা দুইদিন বাড়িতেই থাকতে বলি, না হলে চোখে ধুলাবালি চলে যেতে পারে। এছাড়া দৈনন্দিন কাজ যেমন লেখাপড়া, টিভি দেখা, কম্পিউটারে কাজ করা এসব কাজ সার্জারির পরদিন থেকেই করা যায়।

• কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত খেলাধুলা এবং চোখে জোড়ে পানির ঝাপটা দেয়া যাবেনা।

• চোখে আঘাত লাগতে পারে এমন যে কোন খেলাধুলা থেকে কয়েক সপ্তাহ বিরত থাকা উচিৎ।

• অপারেশনের পরদিন থেকে গলার নিচ হতে গোসল করা যায়

• দৃষ্টি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহ দু’এক বা কারো কারো ক্ষেত্রে মাসখানেক চোখে দৃষ্টি সামান্য ওঠা-নাম করতে পারে, এটা স্বাভাবিক। অনেকক্ষেত্রে চোখে শুষ্কভাব মনে হতে পারে, এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে যে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ ব্যবহার করতে বেলেছেন সেটি ব্যবহার করতে হবে। এই শুষ্কভাব অনুভূত হওয়ার কারণ হচ্ছে, অপারেশন পরবর্তী সময়ে চোখের অশ্রু গ্রন্থিগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। এই অবস্থা পরে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া যদি চোখে অন্য কোন সমস্যা হয় তাহলে রোগীর উচিৎ দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা।যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাঁরা তাঁদের নিকটস্থ চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া।

অপারেশনের পরদিন অবশ্যই ডাক্তারের কাছে ফলো-আপের জন্য আসতে হবে। পরবর্তী ফলো-আপগুলো সপ্তাহে বা মাসে হতে পারে। তবে এই ফলো-আপগুলো নিয়ম মেনে রক্ষা করা আপনার চোখের দ্রুত সেরে ওঠার জন্য সহায়ক।

ফেমটো-ফ্ল্যাপ ল্যাসিক সার্জারির ধাপসমূহঃ
ধাপ ১ - Creating the flap. ফ্ল্যাপ তৈরি করা- অতিসূক্ষ ফেমটোসেকেণ্ড লেজারের মাধ্যমে একটি ফ্ল্যাপ তৈরি করা হয়
ধাপ ২ - Relocating the patient . রোগীকে স্থানান্তর করা- ফ্ল্যাপ তৈরির পর রোগীকে এক্সাইমার লেজার মেশিনে স্থানান্তর করা হয়
ধাপ ৩ - Folding back the flap.
ফ্ল্যাপ ভাজ করা- এ পর্যায়ে ফ্ল্যাপটিকে কর্নিয়ার একপাশে সড়িয়ে রাখা হয়
ধাপ ৪- Correcting the error.
পাওয়ার কারেকশন - এ ধাপে এক্সাইমার লেজারের সাহায্যে চশমার পাওয়ার কারেকশন করা হয়।
ধাপ ৫ - Repositioning the flap.
লেজার প্রয়োগ শেষ হলে চোখ ধুয়ে পরিষ্কার করে কর্নিয়ার সেই সড়িয়ে রাখা ফ্ল্যাপটি আবার নামিয়ে দেয়া হয় এবং অপারেশন শেষ করা হয়।

করণীয়-
  • অপারেশন শেষে বাড়ি ফেরার সময় অবশ্যই সাথে একজন সঙ্গী থাকা
  • বাড়ি ফিরে কয়েকঘন্টা ঘুমানো ভালো, কেননা এ সময় চোখের বিশ্রাম খুবই জরুরী
  • ডাক্তারের পরামর্শ সঠিক ভাবে সাবধানে অনুসরণ করা
  • অপারেশন শেষে বাসায় ফেরার সময় চোখে একটি সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

বর্জনীয়-
  • ধুলাবালি বেশি এমন জায়গাগুলোতে কিছু দিন যাওয়া
  • ডাক্তার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত গরম পানিতে গোসল বা সাঁতারকাটা
  • চোখ কচলানো বা চুলকানো
  • ছ’সপ্তাহ পর্যন্ত ডুব দিয়ে গোসল করা।
  • ২ সপ্তাহ পর্যন্ত চোখের মধ্যে বাইরের পানি দেয়া
  • ২-১ সপ্তাহ মেক আপ ব্যবহার করা এবং ড্রাইভিং করা
  • চোখে আঘাত লাগতে পারে এমন যে কোন খেলাধুলা থেকে কয়েক সপ্তাহ বিরত থাকা উচিৎ।
  • যাদের ছোট বাচ্চা আছে তারা বাচ্চা কোলে নিলে সাবধানে থাকবেন যাতে চোখে বাচ্চার হাতের খোঁচা না লাগে।
  • কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত খেলাধুলা না করা, চোখে জোড়ে পানির ঝাপটা দেয়া যাবেনা তবে অপারেশনের পরদিন থেকে গলার নিচ হতে গোসল করা যায়
  • অপারেশন শেষে বাসায় ফেরার সময় যদি গাড়ি ব্যবহার করেন তবে গাড়ির জানালার কাঁচ লাগিয়ে দিন। যারা ঢাকার বাইরে যাবেন তাঁরা বাসের বা ট্রেনের জানালার পাশের সিটে বসবেন না। যাত্রা বিরতির সময় যেখানে বাস থামে সেখানে পারতপক্ষে নামবেন না। আর বিশেষ প্রয়োজনে যদি নামতে হয় তবে বাস থামার ৫ থেকে ১০ মিনিট পরে নামবেন। যেখানে বেশী লোকজনের সমাগম হয় সেসব জায়গা এড়িয়ে চলুন।